মাত্র আট বছর বয়সেই পিতা, মাতা ও দাদাকে হারিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.)...


মাত্র আট বছর বয়সেই পিতা, মাতা ও দাদাকে হারিয়ে হজরত মুহাম্মদ (সা.) পুরোপুরি অসহায় হয়ে পড়েন। এমন অবস্থায় তাঁর দায়িত্ব নেন চাচা আবু তালেব। তিনি মুহাম্মদ (সা.)–কে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, এমনকি নিজের সন্তানদের চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন। একবার আবু তালেব বাণিজ্য সফরে শ্যামদেশে যাচ্ছিলেন। শিশু মুহাম্মদ (সা.) তাঁকে জড়িয়ে ধরলে আবু তালেব আর নিজেকে সামলাতে পারেননি এবং তাঁকেও সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন নবীজির বয়স ছিল মাত্র ৯ বছর। [নবীয়ে রহমত, সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভী, মাকতাবাতুল হেরা, পৃ. ১২৪]

banner

নবুয়ত প্রাপ্তির পর যখন মুহাম্মদ (সা.) মানুষকে তাওহিদের দিকে ডাকতে লাগলেন, তখন মক্কার নেতারা বিরক্ত হয়ে আবু তালেবের কাছে অভিযোগ করেন, যাতে তিনি ভাতিজাকে দাওয়াতি কাজ বন্ধে বাধ্য করেন। প্রথমে আবু তালেব তাঁদের শান্ত করে বিদায় দেন। কিন্তু কয়েক দিন পর তাঁরা আবার এসে হুমকি দেন। এবার আবু তালেব নবীজিকে ডেকে বলেন, ‘আমার কথা বিবেচনা করো, নিজের জানেরও মায়া করো।’
নবীজি (সা.) ভেবে নেন, চাচা হয়তো আর সহায়তা করতে চান না। তাই তিনি বলেন, ‘যদি তারা আমার ডান হাতে সূর্য আর বাঁ হাতে চন্দ্রও তুলে দেয়, তবু আমি আল্লাহর দাওয়াতি কাজ ছেড়ে দেব না।’ কথাগুলো বলতে বলতে তিনি কেঁদে ফেলেন। তখন আবু তালেব তাঁকে থামিয়ে বলেন, ‘ভাতিজা, তোমার ইচ্ছামতো দাওয়াত চালিয়ে যাও। আমি কখনোই তোমাকে শত্রুর হাতে তুলে দেব না।’ [সীরাতে ইবনে হিশাম, বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার, ঢাকা, পৃ. ৬২]
banner
এরপর আবু তালেব জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নবীজি (সা.)–কে রক্ষা করেন। এমনকি যখন কুরাইশেরা মুসলমানদের সামাজিকভাবে বর্জন করেছিল, তখনও তিনি অনাহারে-অর্ধাহারে থেকেও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তিনি ইমান আনেননি। এটা ছিল নবীজির জীবনের অন্যতম গভীর কষ্ট।
আবু তালেব মৃত্যুশয্যায় থাকার সময় নবীজি (সা.) শেষবারের মতো তাঁকে দাওয়াত দেন: ‘চাচাজান, শুধু একবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলুন, আমি আল্লাহর সামনে আপনার জন্য সুপারিশ করব।’ কিন্তু সেখানে থাকা কাফের নেতারা তাকে প্ররোচনা দেয়—‘তুমি কি তোমার পিতৃপুরুষের ধর্ম ছেড়ে দেবে?’ অবশেষে আবু তালেব বলেন, ‘আমি আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের ওপরই আছি।’ [তাফসীর ইবন কাসীর, তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি, ১৫/৫৩০-৫৩১]
banner
এ কথা শোনার পর নবীজি (সা.) বললেন, ‘আমি আপনার (মাগফিরাতের) জন্য দোয়া করতেই থাকব, যতক্ষণ না আল্লাহ নিষেধ করেন।’ (তাফসীর ইবন কাসীর, তাফসীর পাবলিকেশন কমিটি, ১৫/৫৩০-৫৩১)
তৎক্ষণাৎ এই আয়াত নাজিল হয়, ‘নবী ও মুমিনদের জন্য উচিত নয় মুশরিকদের মাগফিরাত কামনা করবে, যদিও তারা কাছের আত্মীয় হয়, যখন তাদের কাছে এটা স্পষ্ট যে তারা নিশ্চিত জাহান্নামের অধিবাসী।’ (সুরা তাওবা, আয়াত: ১১৩)
banner
পরে আবু তালেব সম্পর্কে আবার নাজিল হয়, ‏‘আপনি যাকে ভালোবাসেন, চাইলেই তাকে হেদায়েত দিতে পারবেন না, কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকেই হেদায়েত দিতে পারেন। আর তিনি হেদায়াতপ্রাপ্তদের ব্যাপারে ভালো করেই জানেন।’ (সুরা কাসাস, আয়াত: ৫৬)
banner
আসলে হেদায়াত এমন জিনিস, আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, তাকেই দেন। কেউ চাইলেই হেদায়েত পাবে না, আবার হেদায়েত ধরেও রাখতে পারে না। এ জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে হেদায়েতের দোয়া করা।

Post a Comment

Previous Post Next Post