৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ। তপ্ত মরুপ্রান্তর পাড়ি দিয়ে নবীজি (সা.) নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাবুক অভিযানে।

 


....সংগ্রহীত...

banner

৬৩০ খ্রিষ্টাব্দ। তপ্ত মরুপ্রান্তর পাড়ি দিয়ে নবীজি (সা.) নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাবুক অভিযানে। ইসলামের ইতিহাসে এটি ছিল কঠিন এক সময়ের যু*দ্ধ। আর ঠিক এই অভিযানের পথেই ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। যু*দ্ধে অংশ নিতে গিয়ে শহীদ হন না কোনো তরবারিধারী বীর, বরং জান্নাতের পথে পাড়ি জমান এক তরুণ সাহাবি, যার হৃদয় ছিল নবীপ্রেমে উজ্জ্বল, আর যাঁর নাম—আবদুল্লাহ জুলবিজাদাইন (রাঃ)। তবে তাঁর এই যাত্রার শুরুটা ছিল অবহেলা, কষ্ট আর আত্মত্যাগের গল্পে ভরা।

banner

ইয়েমেন সীমান্তবর্তী এক গ্রামে জন্ম তাঁর। নাম ছিল আবদুল উজ্জা। ছোট্ট পরিবার—মা, বাবা আর সে। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই বাবা মারা যান। সংসারে নেমে আসে অভাব। মা বাধ্য হয়ে দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেও সৎপিতা তাঁকে গ্রহণ করতে রাজি হন না। শেষমেশ আশ্রয় মেলে চাচার ঘরে, কিন্তু ভালোবাসা নয়—জুটে অবহেলা আর কঠোর শ্রম।
banner
একদিন পাশের রাস্তা দিয়ে যাওয়া আরব কাফেলার কাছ থেকে শোনেন এক নতুন নবীর কথা, যিনি মানুষকে সত্য ও আলোর পথে ডেকে আনছেন। মন মেতে ওঠে সেই নবীর প্রতি। এর পর থেকে আবদুল উজ্জা এ পথ দিয়ে যত কাফেলা যেত, সবার কাছে আরবের নবী সম্পর্কে জানতে চাইতেন। সময়ের সঙ্গে তাঁর বিশ্বাস গভীর হয়। একদিন চাচাকে জানালেন, তিনি মদিনায় যাবেন—নবীজির (সা.) হাতে ইসলাম গ্রহণ করবেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চাচা তাঁকে নি*র্দয়ভাবে মা*রধর করে তাঁর পরনের কাপড় খু*লে দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন।
banner
র*ক্তাক্ত শরীর নিয়ে ছুটে যান মায়ের কাছে। মা বাধা দেন না। বরং বিদায় জানান একটি চাদর দুই ভাগ করে—একটি লুঙ্গি আর অন্যটি গায়ে জড়িয়ে। সেই দুটি কাপড় পরে তিনি পাড়ি জমান মদিনার পথে। বহু কষ্টে মদিনায় এসে পৌঁছালে নবীজি (সা.) তাঁকে বুকে টেনে নেন, আর আদর করে নাম দেন "জুলবিজাদাইন"—অর্থাৎ দুই চাদরওয়ালা।
banner
ইসলাম গ্রহণের কিছুদিন পর ডাক আসে তাবুক অভিযানের। সাহাবিরা প্রস্তুত। আবদুল্লাহও নাম লেখান সৈনিক হিসেবে। যুদ্ধে যাওয়ার আগে নবীজি (সা.) তাঁর হাতে গাছের ছাল বেঁধে দোয়া করেন: "হে আল্লাহ, আমি কাফেরদের জন্য আবদুল্লাহর রক্ত হারাম করে দিলাম।" আবদুল্লাহ কাঁদতে কাঁদতে বলেন, "আমি তো শাহাদাত চাই!" নবীজি সান্ত্বনা দেন, ‘চিন্তা কোরো না, যদি তুমি অসুস্থ হয়েও মারা যাও অথবা বাহন থেকে পড়েও মারা যাও, তবু তুমি শহীদ হিসেবে গণ্য হবে।’
banner
তাবুকের দিকে যাত্রা করল মুসলিম বাহিনী। কিন্তু তাবুক পৌঁছানোর আগেই জ্বরে আক্রান্ত হন আবদুল্লাহ। নবীজির তাঁবুতে তাঁর ঊরুর ওপর মাথা রেখে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। যাঁকে দেখার জন্য পাড়ি দিয়ে এসেছিলেন দীর্ঘ পথ, তাঁর বাহুতে ব্যথার দহন এঁকে তিনি নিজেই চলে গেলেন জান্নাতের উদ্দেশ্যে। রাতেই কাফন-দাফন সম্পন্ন হয় নিভৃত মরু প্রান্তরে। জানাজা পড়ান নবীজি (সা.), কবরে নামেন নিজ হাতে। আবু বকর ও ওমর (রা.) সহায়তা করেন। চোখভরা অশ্রু নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন, ‘হে আল্লাহ, আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত আমি এই যুবকের ওপর সন্তুষ্ট ছিলাম। তুমিও তার ওপর সন্তুষ্ট হও।’
banner
নবীজি (সা.) খুব অল্প কয়েকজন মানুষকে দাফন করতে তাঁদের কবরে নেমেছেন। আবদুল্লাহ জুলবিজাদাইন তাঁদের একজন। তাঁর এমন সৌভাগ্য দেখে আবু বকর (রা.) আফসোস করে বললেন, ‘হায়! এই কবরে যদি আমি হতাম!’
banner
তথ্যসূত্র: সিরাতে ইবনে হিশাম ২/৫২৮; যাদুল মা’আদ ৩/৪৭৩; নবীদের কাহিনী, ড. মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব ৬০১

Post a Comment

Previous Post Next Post