তখন দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা)-এর খেলাফতকাল। মিসরের শাসনকর্তা হিসেবে হজরত আমর ইবনে আ’স (রাঃ) দায়িত্ব পালন করছিলেন। তখনো খ্রিস্টানরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলো ইসলামের জয়রথ থামানোর। রোমান বাহিনী শেষ পর্যন্ত আলেক্সান্দ্রিয়া দখলেরও পায়তারা করে। কিন্তু সুশাসক আমর ইবনে আ’স (রা) শক্ত হাতে তাদের প্রতিহত করেন। এরপরেও খ্রিস্টানরা স্বাধীনভাবে নিজেদের ধর্ম পালন করে যাচ্ছিলো।

একদিন সকালবেলা। আলেকজান্দ্রিয়ার খ্রিষ্টান পল্লীতে হইচই পড়ে গেলো। বাজারে জটলা হয়ে আছে। উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। সেখান থেকে খ্রিস্টানদের স্থানীয় চার্চ এর বিশপ আমর ইবনে আ’স (রাঃ) এর বাসভবনে গেলেন বাজারের ঘটনা সমাধান করার জন্য। তাঁর সাথে গেলেন আরও অনেকে।

বিশপ জানালেন কেউ একজন গত রাতে যিশু খ্রিষ্টের মার্বেলের মূর্তির নাক ভেঙে ফেলেছে। স্থানীয় খ্রিস্টানদের কাছে এ মূর্তিটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। খ্রিষ্টান প্রতিনিধি দলের দাবী এটা মুসলমানদের কাজ। তাই তারা আমর ইবনে আস (রাঃ) কাছে বিচার চাইতে এসেছে।

আমর ইবেন আ’স (রাঃ) এ কথা শুনে অত্যন্ত দু:খিত হলেন। তিনি বললেন- “আমি খুবই লজ্জিত, ব্যথিত। সত্যি কথা, ইসলামে মূর্তিপূজা জায়েজ নেই। কিন্তু, অন্য ধর্মের উপাস্যকে গালি দেয়া পর্যন্তও হারাম। প্লিজ, আপনি মূর্তিটা মেরামত করে নিন। আমি পূর্ণ খরচ দেব।”
কিন্তু বিশপ বললেন- “এ মূর্তি মেরামত করা যাবে না।”
আ’স বললেন- “তবে নতুন করে বানান। আমি খরচ দেব।”
বিশপ সেই প্রস্তাব ও প্রত্যাখ্যান করে বললেন- ‘এর একটাই ক্ষতিপূরণ হতে পারে, আমরা আপনাদের মুহাম্মাদ (সাঃ) এর মূর্তি বানিয়ে সেটার নাক ভাঙব’। (নাউজুবিল্লাহ)

একথা শুনেই তাঁর গায়ে আগুন ধরে গেলো। তিনি কিছুক্ষণ নীরব থেকে বিশপকে বললেন- “আপনি যা বললেন সেটা সম্ভব না। আমাদের সম্পদ, পরিবারের চেয়েও মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বেশি ভালোবাসি। আমার অনুরোধ, এ প্রস্তাব ছাড়া অন্য যেকোনো প্রস্তাব করুন আমি রাজি আছি। আপনারা চাইলে আমাদের যে কারো নাক ও কেটে দিতে পারেন।” খ্রিষ্টান নেতারা সবাই এ প্রস্তাবে সম্মত হলো।

পরদিন খৃষ্টান ও মুসলমানরা বিরাট এক ময়দানে জমায়েত হলো। মিসরের শাসক, সেনাপতি আমর (রা:) সবার সামনে হাজির হয়ে বিশপকে বললেন- “এ দেশ শাসনের দায়িত্ব আমার। যে অপমান আজ আপনাদের, তাতে আমার শাসনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে। তাই এই তরবারি গ্রহণ করুন এবং আমার নাক কেটে দিন।” এ কথা বলেই বিশপকে একখানি ধারালো তরবারি হাতে দিলেন।
বিশপ অবাক হয়ে গেলো। বলে কী! একজন শাসকের নাক কেটে দিব?
জনতা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে পিনপতন নীরবতা।

হঠাৎ সেই নীরবতা ভঙ্গ করে একজন মুসলিম সৈন্য এগিয়ে এলেন। চিৎকার করে বললেন- “আমিই দোষী, সেনাপতির কোনো অপরাধ নেই। আমিই মূর্তির নাক ভেঙেছি। এই যে, আমার হাতেই আছে সে নাক। তবে মূর্তি ভাঙার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। মূর্তির মাথায় বসা একটি পাখির দিকে তীর নিক্ষেপ করতে গিয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।”

সৈন্যটি এগিয়ে এসে বিশপের তরবারির নিচে নিজেকে সঁপে দিলেন। ঘটনার আকস্মিকতা দেখে স্তম্ভিত বিশপ! নির্বাক সবাই। মুসলমানদের এমন রাসূল প্রেম আর সাহসিকতা দেখে বিশপের অন্তরাত্মা রোমাঞ্চিত হয়ে উঠলো।

তরবারি ছুড়ে বিশপ বললেন- “ধন্য সেনাপতি, ধন্য হে বীর সৈনিক, আর ধন্য আপনাদের মোহাম্মদ (সাঃ), যার মহান আদর্শে আপনারা মহৎ, উদার, নির্ভীক ও শক্তিমান ব্যক্তি হয়ে গড়ে উঠেছেন। যীশু খ্রিষ্টের প্রতিমূর্তিই অসম্মান করা হয়েছে সন্দেহ নেই, কিন্তু তার চেয়েও বড় অন্যায় হবে যদি এমন লোকের অঙ্গহানি করি।”

সুবহান আল্লাহ! আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সাঃ) মুসলমানদের কাছে এমনি প্রিয় যে প্রয়োজনে জান যাবে, কিন্তু আল্লাহ কিংবা তাঁর রাসুলের কোন ক্ষতি সাধন হতে দেওয়া যাবেনা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এভাবেই আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলকে ভালোবাসার ক্ষমতা দিন। আমীন।
Post a Comment