📘 অধ্যায় ৫: খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্য
সঠিক খাবার ও জীবনযাপনই হতে পারে আপনার শক্তিশালী অস্ত্র
থাইরয়েড সমস্যা থাকলে শুধুমাত্র ওষুধ খেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে—এমনটা নয়। আপনার খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চা ও দৈনন্দিন রুটিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে হরমোন নিয়ন্ত্রণে। এই অধ্যায়ে আমরা দেখব কী খাবেন, কী খাবেন না, এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনে কী কী বিষয় খেয়াল রাখবেন।
🥗 কোন খাবার খাওয়া উচিত / উচিত নয়
✅ খাওয়ার মতো খাবার (উপকারী):
আয়োডিনযুক্ত লবণ:
আয়োডিন হরমোন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয়।
অবশ্যই পরিমিত মাত্রায় খেতে হবে।
মাছ ও সামুদ্রিক খাবার:
আয়োডিন ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে ভরপুর
যেমন: সামুদ্রিক মাছ, কাঁকড়া, শুঁটকি
ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার:
প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামে সমৃদ্ধ
ফল ও সবজি:
বিশেষ করে কলা, পেয়ারা, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা, গাজর
আঁশযুক্ত খাবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় (Hypothyroidism-এ সাধারণ সমস্যা)
বাদাম ও বীজ:
বিশেষ করে আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্স সিড (moderation-এ)
❌ এড়িয়ে চলার মতো খাবার:
সোয়া (soy)-জাতীয় খাবার:
Hypothyroidism-এর ক্ষেত্রে হরমোন শোষণে বাধা দিতে পারে।
ক্রুসিফেরাস সবজি (বিশেষ করে কাঁচা):
বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি — এদের মধ্যে গয়ট্রোজেনিক উপাদান থাকতে পারে যা থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতা কমাতে পারে।
তবে ভালভাবে রান্না করলে এদের ক্ষতিকর প্রভাব কমে যায়।
অতিরিক্ত কফি ও ক্যাফেইন:
থাইরয়েড ওষুধ খাওয়ার আগে কফি খেলে ওষুধ কাজ না-ও করতে পারে।
অতিরিক্ত চিনি ও প্রক্রিয়াজাত খাবার:
হরমোন ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।
🧂 আয়োডিন ও থাইরয়েডের সম্পর্ক
আয়োডিন হল থাইরয়েড হরমোন তৈরির প্রধান উপাদান। আয়োডিন ঘাটতি হলে গয়টার (গলার ফোলা) হতে পারে। তবে:
Hypothyroidism থাকলে অতিরিক্ত আয়োডিন খাওয়া বিপদজনক হতে পারে
অনেক সময় অটোইমিউন থাইরয়েড ডিজঅর্ডারে আয়োডিন সংবেদনশীলতা দেখা যায়
তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আয়োডিন ট্যাবলেট বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া ঠিক নয়
📌 পরামর্শ: শুধু আয়োডিনযুক্ত লবণই যথেষ্ট — আলাদাভাবে কিছু নেওয়ার দরকার নেই যদি না ডাক্তার বলেন.
🏃 ব্যায়াম ও শরীরচর্চার পরামর্শ
✅ কেন ব্যায়াম প্রয়োজন?
মেটাবলিজম ঠিক রাখতে সাহায্য করে
ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে
মানসিক চাপ কমায়
ঘুম ভালো হয়
🧘♀️ কেমন ব্যায়াম করবেন?
জোরে হাঁটা বা ওয়াকিং: প্রতিদিন ৩০ মিনিট
যোগব্যায়াম ও শ্বাসচর্চা (প্রাণায়াম): মন ও হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে
হালকা স্ট্রেচিং বা হোম এক্সারসাইজ
প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্ট বা ফিটনেস ট্রেইনারের পরামর্শ নিন
📌 ব্যায়াম শুরু করার আগে আপনার শরীরের ক্ষমতা বুঝে শুরু করুন — বেশি চাপ দেবেন না।
📝 উপসংহার:
সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা আপনাকে শুধু ওষুধের ওপর নির্ভরশীল না থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করবে। আপনি কী খাচ্ছেন, কিভাবে চলাফেরা করছেন — এই বিষয়গুলো আপনার থাইরয়েড হরমোনের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই জেনে-বুঝে সিদ্ধান্ত নিন, সুস্থ থাকুন।

.jpg)
Post a Comment